fight against coronaEducation Enviornment Health Lifestyle Others World 

করোনা মোকাবিলায় একগুচ্ছ পরামর্শ

আমার বাংলা অনলাইন নিউজ ডেস্ক: সহজে করোনা বোঝার উপায় নেই। এক্ষেত্রে সর্দি, কাশি, নাক দিয়ে জল পড়া, জ্বর, শ্বাসকষ্ট, মাথা ব্যথার মতো লক্ষণ প্রাথমিকভাবে দেখা যায়। তবে সিজেন চেঞ্জের কারণে ভাইরাল ফিভার হলেও সর্দি, কাশি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। এগুলি হলে অবশ্যই পরীক্ষা করান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা আক্রান্তের সংস্পর্শে আসার ৫-১৪ দিনের মধ্যে পরীক্ষা করাতে হবে। তাই বলে যে কোনও সর্দি, কাশিকে করোনা মনে করে আতঙ্কিত হবেন না। এই সময় সাধারণত সর্দি ও কাশিতে ভোগে শিশুরা।

শুরুতে করোনা চেনার ক্ষেত্রে রোগীর ইতিহাস জানাটাও আবশ্যিক। করোনায় আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে রোগীর শ্বাসকষ্টের সমস্যা বাড়ে। সাধারণ জ্বরে অবশ্য শ্বাসকষ্ট বিশেষ হয় না। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা হলেই দ্রুত ডাক্তারের কাছে যান ও তাঁর পরামর্শ মতো চলুন।

মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক রাখাটা জরুরি। দূরকে কাছে করার এখন অনেক উপায় রয়েছে। ফোন বা ইন্টারনেটের মাধ্যমে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন এই পরিস্থিতিতে। মানুষের থেকে মানুষে এই মারণ ভাইরাস ছড়ায় এটা মাথায় রাখবেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এবিষয়ে জানিয়েছেন, সামনা-সামনি কথা বলতে হলে অন্তত ৩ ফুট বা ১ মিটার দূরত্ব বজায় রাখা জরুরি। আইসোলেশনের মাধ্যমেই এই রোগ থেকে মুক্তি মিলতে পারে।

সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে মাস্কের প্রধানত প্রয়োজন হয় না। মাস্কের বিশেষত প্রয়োজন রয়েছে চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী, নার্স অথবা যাঁরা রোগীর সংস্পর্শে রয়েছেন বা থাকছেন। তবে এই সময় অন্য যে কোনও মাস্ক ব্যবহার করা উচিত হবে না। তা হবে অনেকটা ঝুঁকির। বিশেষজ্ঞরা আরও জানিয়েছেন, এই সময় কেবলমাত্র N-95 মাস্ক ব্যবহার করা আবশ্যিক। তবে করোনা আক্রান্ত রোগীদেরও মাস্ক পড়তে হবে। অ্যাম্বুলেন্স বা অন্যান্য গাড়ি চালানোর সঙ্গে যুক্ত চালকের অবশ্যই মাস্ক পড়তে হবে। একজনের মাস্ক অন্য কেউ ব্যবহার করবেন না। এটি সম্পূর্ণ অনুচিত কাজ। জীবাণুমুক্ত করে তবেই মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

করোনায় শিশুদের সংক্রমণের ঘটনা খুবই কম। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা মূলত দেহের প্রোটিনে আক্রমণ করে। শিশুদের শরীরে সেই প্রোটিন থাকে না। তাই শিশুরা যথেষ্ট নিরাপদ। আবার করোনার সঙ্গে অন্যান্য ইনফেকশনের কারণে শিশুদের অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী দেখা গিয়েছে, শিশুদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের ঘটনা তুলনামূলক কম। শিশুদের ক্ষেত্রে খুব একটা ঝুঁকি নেই। তবে এই ভাইরাস কখন মারাত্মক আকার নিতে পারে তা বলা অনেকটাই মুশকিল। যাঁরা শিশুদের সঙ্গে থাকছেন, তাঁদের বেশি করে সতর্ক হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। এক্ষেত্রে দেখতে হবে শিশুরা যেন বারবার চোখে, মুখে বা নাকে হাত না দেয়। শিশুদের ক্ষেত্রেও সামাজিক মেলামেশা বন্ধ করতে হবে।

করোনা প্রতিরোধে হাত ধুতে হবে বারে-বারে। ৬০-৭০% অ্যালকোহল যুক্ত স্যানিটাইজারের সাহায্যে হাত ধোওয়া উচিত। করোনা ভাইরাস প্রোটিন দিয়ে তৈরি। তার চারপাশে রয়েছে লিপিটেড আস্তরণ। লিপিড ও প্রোটিনকে ভাঙার জন্য প্রয়োজন হয় অ্যালকোহলের। অ্যালকোহল-বিহীন স্যানিটাইজার কোনও কাজ করবে না। তবে হাত ধোওয়ার ক্ষেত্রে সাধারণ সাবান অনেক বেশি কার্যকরী হয়। তবে হাত ধোওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলাটাও জরুরি। দুই হাত অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে ধুতে হবে। হাতের চেটো, আঙুলের ফাঁক, হাতের উল্টোপিঠ ভাল করে ধুয়ে নিতে হবে। সুস্থ্য থাকতে বারবার হাত ধোওয়ার অভ্যাস করুন। হাত ধোওয়ার পর মোছার জন্য পরিষ্কার কাপড় বা টিস্যু ব্যবহার করবেন। ব্যবহার করার পর কাপড় সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন এবং টিস্যু ডাস্টবিনে ফেলে দেবেন। খাবার আগে অবশ্যই হাত ভাল করে ধোবেন।

মাছ, মুরগি বা পাঁঠার মাংস ও ডিম খাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও ভয় নেই। মাছ বা মাংস থেকে কোভিড-১৯ সংক্রামিত হয় না। এক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের সঙ্গে প্রাণীর কোনও যোগ নেই। প্রাণীজ প্রোটিন থেকে পুষ্টি পাওয়া যায়। মাছ, মাংস না খেলে প্রোটিনের ঘাটতি হয়। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রোটিনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। এই সময় প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার না খেলে অন্য রোগের আক্রমণ বেড়ে যেতে পারে। তাই মাছ বা মাংস খেতে পারেন নির্ভয়ে। অসুখের সঙ্গে লড়াই করতে হলে পুষ্টির প্রয়োজন। না হলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমবে। এই সময় রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ানো বিশেষভাবে দরকার। শিশুদের ক্ষেত্রেও সব কিছু খাওয়াতে অসুবিধা নেই। করোনা আতঙ্কে অনেকেই শিশুদের মাছ বা মাংস খাওয়াচ্ছেন না। এক্ষেত্রে তা অবশ্যই সহজপাচ্য হতে হবে। খাবার নিয়ে কোনও বিধি-নিষেধ নেই।

গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা নিতে হবে। এইসময় তাঁদের অবশ্যই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা একান্তভাবে উচিত। ইনফেকশন হলে তা মারাত্মক আকার নিতে পারে। এই সময় ইনফেকশনের প্রবণতা বাড়ার সম্ভবনা থেকে যায়। জরুরি অবস্থা, প্রেসার ওঠা-নামা প্রভৃতির ক্ষেত্রে একজন বাড়ির মানুষকে সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া উচিত। তবে বেশি সংখ্যক লোক নিয়ে হাসপাতালে যাবেন না। আবার যাঁরা টেস্ট টিউব বেবির কথা ভাবছেন, তাঁরা কয়েক মাস অপেক্ষা করুন। এই সময় প্রেগনেন্সি এড়িয়ে চলা উচিত।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ৬০-৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সিওপিডি, ফুসফুসের জটিল রোগ, ডায়াবেটিস এবং কিডনির সমস্যা থাকলে বয়স্কদের বিপদের আশঙ্কা সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে একান্ত উচিত। অল্পবয়সীদের মধ্যে মৃত্যুর আশঙ্কা অনেকটাই কম হয়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, বিভিন্ন জিনিসের ওপর অনেক সময় পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে এই ভাইরাস। স্টিলের ওপর বেঁচে থাকতে পারে ২ দিন, তামার ওপর ৬ ঘন্টা, প্লাস্টিকের ওপর ৭২ ঘন্টা, কার্ডবোর্ডের ওপর ২৪ ঘন্টা ও কাঁচের ওপর দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে এই ভাইরাস। আশ্চর্যজনকভাবে চোখ দেখা না গেলেও একজন থেকে অন্যজনের দেহে প্রবেশ করে কোভিড-১৯।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের বক্তব্য, আক্রান্ত হয়েও যাঁরা লুকিয়ে থাকছেন তাঁরা দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করুন। চিকিৎসা না করিয়ে আপনি নিজের ও নিজের সন্তানের, এমনকী পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজনদেরও মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন।

করোনা নিয়ে কোনও গুজবে কান দেবেন না। পাশাপাশি গুজব ছড়াবেন না। এইসময় বেশি করে ভিটামিন-এ, সি এবং প্রোটিনজাতীয় খাবার ও বেশি করে জল পান করুন। সম্ভব হলে প্রতিদিন ১৫-২০ মিনিট ব্যায়াম বা শরীরচর্চা করুন। তবে কাঁচা সবজি বা বেশিক্ষণ কেটে রাখা ফল খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। ফলের রস, স্যালাড খাওয়া বন্ধ রাখুন। সুস্থ থাকুন, স্বাভাবিক থাকুন ও নিজেকে যত্নে রাখুন। সবমিলিয়ে এই মারণ ভাইরাস থেকে বাঁচা যাবে। এক্ষেত্রে অবশ্যই সরকারি নির্দেশিকাগুলি যথাযত মেনে চলুন। আসুন, আমি-আপনি ও সবাই মিলে এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।

Related posts

Leave a Comment