বন্ধের পথে ভোডাফোন-আইডিয়া, চাকরি হারাতে বসেছেন লক্ষাধিক কর্মী
আমার বাংলা অনলাইন নিউজ ডেস্ক: শুক্রবার সকালে সুপ্রিম কোর্টে তিরষ্কার। তারপরই তড়িঘড়ি সব টেলিকম সংস্থাগুলিকে নোটিস দিয়ে কেন্দ্র জানিয়ে দেয়, শুক্রবারই রাত ১১.৫৯ মিনিটের মধ্যে সব বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ সত্ত্বেও বকেয়া না মেটানোয় এদিন টেলিকম সংস্থাগুলিকে তীব্র তিরষ্কার করা হয়। প্রসঙ্গত, গত অক্টোবর মাসে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ ছিল, ৩ মাসের মধ্যে টেলকম মন্ত্রককে সমস্ত বকেয়া মিটিয়ে দিতে হবে। কিন্তু ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও বেশিরভাগ টেলিকম সংস্থা একটি টাকাও না মেটানোয় আদালত অবমাননার সামিল হিসাবে দেখছে সুপ্রিম কোর্ট।
এয়ারটেল, ভোডাফোন-সহ একাধিক টেলিকম সংস্থার অধিকর্তাদের আদালত অবমাননার কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছেন মাননীয় বিচারপতি অরুণ মিশ্র, বিচারপতি আবদুল নাজির এবং বিচারপতি এম আর শাহের বেঞ্চ। এদিন বিচারপতিরা জানান, যে কোনও ধরনের দুর্নীতি বন্ধ হওয়া উচিত এবং এটাই শেষ সুযোগ এবং শেষ সতর্কবার্তা। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে আগামী মার্চ মাসের ১৭ তারিখ। তার আগে যদি সম্পূর্ণ বকেয়া অর্থাৎ ৯২ হাজার কোটি টাকা না মেটানো হয়, তাহলে সব টেলিকম সংস্থার অধিকর্তাদের সশরীরে আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমনকি টেলিকম মন্ত্রকের অফিসারদের নোটিশ দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে- কোন অধিকারে সুপ্রিম কোর্টের রায় অমান্য করে এজিআর (অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভেনিউ) ফ্রিজিংয়ের নির্দেশিকা জারি করে?
সরকারের থেকে নির্দেশ পাওয়ার পর ভারতী এয়ারটেলের কর্তারা জানিয়েছে, তারা ঋণ শোধ করতে প্রস্তুত। তবে তার জন্য অন্তত ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় প্রয়োজন। এদিনই টেলিকম দফতরকে চিঠি লিখে ভারতী এয়ারটেলের তরফে জানানো হয়েছে, “শীর্ষ আদালতের নির্দেশ মতো আমরা ১০ হাজার কোটি টাকা বকেয়া শোধ করতে প্রস্তুত। তবে আমাদের ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিতে হবে।” বকেয়া মোট ৩৫ হাজার ৫৮৬ কোটির মধ্যে বাকি ২৫ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা তারা ১৭ মার্চের মধ্যে পরিশোধ করবে।
তবে ভোডাফোন-আইডিয়া সংস্থা সরকারের এই নির্দেশে কার্যত খাদের কিনারায় পৌঁছেছে। এর থেকে বেরোনোর কোনও রকম রাস্তা না পেলে বাধ্য হয়ে পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়ার কথাও জানিয়েছে তারা। ভোডাফোনের কাছ থেকে ৫৩ হাজার কোটি টাকা পায় কেন্দ্রীয় সরকার যার মধ্যে স্পেকট্রাম বাবদ বকেয়া রয়েছে ২৪ হাজার ৭২৯ কোটি টাকা। আর বাকি ২৮ হাজার ৩০৯ কোটি টাকা লাইসেন্স বাবদ। গত সপ্তাহেই ভোডাফোনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার নিক রিড বলেন, অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ (এজিআর) নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পর ভারতে কোম্পানির অবস্থা সংকটপূর্ণ।

গত সেপ্টেম্বর মাসেই ভোডাফোন-আইডিয়া লিমিটেড (ভিআইএল) ৫০ হাজার ৯২২ কোটি টাকা লোকসান করেছে। পুনরায় ডিসেম্বর মাসে এই সংস্থার ক্ষতি হয়েছে ৬ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা। এরকম সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে বকেয়া শোধ করা ভোডাফোন-আইডিয়া লিমিটেডের পক্ষে কার্যত অসম্ভব বলেই মনে করছে ওয়াকিবহল মহল। এমনকি ভোডাফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো আশঙ্কাও তৈরি হয়েছে। ভোডাফোন-আইডিয়া এর অসংখ্য কর্মচারী তাদের চাকরি খোয়াবার ভয়ে দিন গুনতে শুরু করেছে।
শুক্রবার এজিআর নিয়ে মামলার রায় ঘোষণা করেছেন বিচারপতি অরুণ মিশ্র, বিচারপতি এস আব্দুল নাজির ও বিচারপতি এম আর শাহর ডিভিশন বেঞ্চ। এই তিন বিচারপতির বেঞ্চ সরকারের বকেয়া আদায়ের জন্য টেলিকম দফতরকে নির্দেশ দিয়েছে। এয়ারটেল, ভোডাফোন ছাড়াও রাষ্ট্রায়ত্ব টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল সহ মোট ১৫টি সংস্থার কাছে সব মিলিয়ে ১ লাখ ৪৭ হাজার কোটি টাকা বকেয়া রয়েছে সরকারের। যার মধ্যে কেবলমাত্র লাইসেন্স বাবদ বকেয়া রয়েছে ৯২ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা এছাড়াও স্পেকট্রাম ব্যবহার বাবদ আরও বকেয়া ৫৫ হাজার ৫৪ কোটি টাকা।